পিরোজপুর প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর মিশুক চালক আয়নাল হক (৩৫), তার স্ত্রী খুকু মনি (২৫) ও তাদের ৩ বছরের শিশু কন্যা আশফিয়া খুনের তিন দিন অতিবাহিত হলেও এ হত্যার নেপথ্যের কারণ বের করতে পারেনি থানা পুলিশ। যদিও পুলিশ এ তিন মার্ডারের পর নিহতের আপন ভাই কাঁচামাল ব্যবসায়ী হেলাল হাওলাদার (৪০), চাচাত চাচা ভ্যান চালক আঃ মালেক হাওলাদার (৬০), চাচাত ভাই কৃষক বেলাল (৪০), মাহবুব (১৯) ও আ. রহিম (১৬) গত তিন দিন ধরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতার কোন তথ্য দিচ্ছে না।
এদিকে, এ চাঞ্চল্যকর তিন খুনের ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহত আয়নালের শ^শুর (খুকুর পিতা) চিত্রা গ্রামের আবুল কালাম সর্দার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে মঠবাড়িয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে সংঘটিত হওয়া এ হত্যার ক্লু বের করতে সিআইডি পুলিশ, ডিবি, পিবিআই, র্যাবসহ থানা পুলিশ একাধিক টিম মাঠে কাজ করে। কিন্তু হত্যার নেপথ্য ক্লু এখন পর্যন্ত বের করতে পারছে না। এদিকে আপন ভাইসহ ৫জনকে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য তিন দিন ধরে আটকের ঘটনায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান- নিহত আয়নালের বাবা উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রত্তন হাওলাদার ১৫/১৬ বছর আগে মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ৪ পুত্রের মধ্যে সু-সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। আয়নালের ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী জয়নাল (২৮) মাস দু’মাস আগে প্রবাসে বসে স্ট্রোক করে মারা যায়। গত একমাস আগে দেশে এনে ওই ভাইয়ের লাশ গ্রামে দাফন করা হয়। এ শোক কাটতে না কাটতেই দরিদ্র পরিবারের এক ভাই যে আরেক ভাইকে হত্যা করতে পারে তা বিশ্বাস করতে এলাকাবাসীর কষ্ট হচ্ছে।
অপরদিকে, চাচা মালেকের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। তিনিও এ ঘটনায় কতটুকু জড়িত? এ প্রশ্ন এলাকার সবার। এছাড়াও একই গোষ্ঠীর সহজ সরল চাচাত ভাই বেলাল এলাকার কারো সাথে কোন বিবাদে জড়িত হয়েছে তাও কেউ বলতে পারে না। যদিও পুলিশের কাছে অপর আটক মাহবুব ও রহিমের বিরুদ্ধে নেশার সাথে জড়িত থাকার এলাকাবাসীর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও একই সমাজ সেবক বৃদ্ধ মোবারক হোসেন (৭০) বলেন- এ হত্যাকা-ের পর আমরা কিংকর্তব্য বিমূঢ়! বিশ্বাসই করতে পারছিনা কি কারণে একটা সহজ পরিবার ও খেটে খাওয়া যুবক, তার স্ত্রী ও তার শিশুকে এভাবে শেষ করে দিল? তিনি এ হত্যাকা-ে জড়িতদের খুঁজে দ্রুত গ্রেফতার করে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জাানন।
ধানীসাফা ইউপির সংশ্লিষ্ট ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মানিক বিশ্বাস বলেন- একের পর এক শোকের মধ্যে নিহতের বড় ভাই হেলালকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩দিন আটকের ঘটনায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকা-ের পর এলাকার অনেক অপরাধী গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তিন লাশের ময়না তদন্তের পর শনিবার সন্ধ্যায় নামাজে যানাযা শেষে ধানীসাফা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে নিহত আয়নাল, স্ত্রী খুকু মনি ও তিন বছরের শিশু কন্যা আশফিয়ার লাশ দাফন করা হয়। ওই গ্রামে এই প্রথম একই পরিবারের তিন জনের লাশ দাফনের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা জানান- শিশুটিসহ ওর বাবা মাকে নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় তাদের ঈদুল আজহার আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে।
এদিকে শনিবার সকালে মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় উৎসব ঈদুল আজহার আনন্দ উপেক্ষা করে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁন ঘটনাস্থল ধানীসাফা গ্রাম পরিদর্শন করেন। মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আ.জম. মাসুদুজ্জামান মিলু বলেন- এ ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যের সুস্পষ্ট কারণ পাওয়া না গেলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন- এ হত্যাকা-ে জমি সংক্রান্ত বিরোধ, মাদক ও স্ত্রীর পরকীয়ার শত্রুতা কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁন বলেন- এ ঘটনার পর থেকেই মঠবাড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপনের নেতৃত্বে র্যাব, সিআডি, পিবিআই, ডিবিসহ থানা পুলিশের ৫টি টিম মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ তিন খুনের নেপথ্যের কারণ বের করতে সক্ষম হব। তিনি আরও বলেন- ইতিমধ্যে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। যা তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।
Leave a Reply